নিয়োগ, বদলী,পদোন্নতি, পিডি নিয়োগ, আউট সোর্সিং এ জনবল নিয়োগ, কেনাকাটার টেন্ডার, গাড়ী বরাদ্দ, যানবাহন ও জ্বালানির অপব্যবহার,ভুয়া বিল ভাউচারে প্রকল্পের টাকা আত্মসাত, কর্মকর্তাদের মধ্যে দলাদলি, হামলা, মামলা, একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদোগার, নারী কেলেংকারী প্রভৃতি ঝটনায় প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছে এই অধিদপ্তরটি। এতে করে অধিদপ্তরটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
এসব বিষয় মন্ত্রী ও সচিবকে জানালেও তারা কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারি। ফলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারনার জন্ম নিচ্ছে। যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যে সরকার অধিদপ্তরটি পরিচালনা করছেন সে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে। জনগন কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না।
উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি নিয়োগে অনিয়ম: উন্নয়ন প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সুনিদিষ্ঠ নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু বর্তমান মন্ত্রী দায়িত্ব পাওয়ার পর হতে সে নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি বা মানা হয়নি। বিশেষ করে (ক) সিলেট, বরিশাল ও লালমনির হাটের ইনসটিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী প্রকল্প (খ) হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, (গ) ৮৬টি ছিটমহলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প (ঘ) সমতল ভুমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প।(ঙ) পিপিআর রোগ নিমূল ও এফএমডি নিয়ন্ত্রন প্রকল্প (চ) ছাগল উন্নয়ন প্রকল্প, (ছ) মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প, (জ) উপকুলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প,(ঞ) আধুনিক প্রযুক্তিতে গরু মোটা-তাজা করন প্রকল্প (ট) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতা জোরদার করন প্রকল্প, (ঠ) এ সকল প্রকল্পে ডিপিপি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নিদেশনা অনুযায়ী জেলা পর্য্যায়ের ৫ম গ্রেডের পিডি নিয়োগের কথা থাকলেও পিডি নিয়োগ কালে সকলেই ছিল উপজেলা পর্য্যায়ের ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা। তাদের বিশেষ যোগ্যতা ছিল আর্থিক সচ্ছলতা। এমনকি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ারও পরে ৬মাস চাকুরীর মেয়াদ থাকবে এমন কর্মকর্তাদের পিডি নিয়োগের বিধান থাকলেও কেবলমাত্র মন্ত্রীর আগ্রহে এফএমডি ও পিপিআর রোগ নিয়ন্ত্রন প্রকল্পে প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬মাস পূর্বে অবসরে যাবেন এমন কর্মকর্তাকেও পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
কর্মকতা নিয়োগ পদোন্নতিতে অনিয়ম: বিগত ৩০ শে অক্টোবর/২০১৮ তারিখে ২২৮ নং স্বারকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুক’লে নুতনভাবে ১৫৬টি পদ বিলুপ্তি স্বাপেক্ষে মোট ৮৬২৬টি পদের সুপারিশ করে। উক্ত পদ সৃষ্টির অন্যতম শর্ত্ব ছিল (ক) নুতন সৃষ্টকৃত ক্যাডার পদগুলি স্থায়ীভাবে সৃজিত হবে এবং সংশ্লিষ্ঠ কম্পোজিশন এন্ড ক্যাডার রুলে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়ন করতে হবে (খ) যে সকল পদ নিয়োগ বিধিতে অর্ন্তভুক্ত নেই সে সকল পদ নিয়োগ বিধিতে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। একইভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিগত ২৯/১২/২০১৯ ইং তারিখের ২৩৯ সংখ্যক পত্রে সুস্পষ্ঠভাবে উল্লেখ রয়েছে (ক) সুপারিশপত্রে উল্লেখিত বেতন গ্রেড এবং নিয়োগ বিধির নিয়োগ যোগ্যতা ও অভিঞ্জতার হুবুহু প্রতিফলন ঘটিয়ে নিয়োগ বিধিমালা প্রনয়ন করতে হবে। (খ) জনপ্রশাসন ও অর্থবিভাগের বাস্তবায়ন-৪ শাখার আরোপিত শর্ত্বাদি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
কিন্তু অদ্য পর্যন্ত ক্যাডার পদের জন্য সুপারিশকৃত পদ সমূহ ক্যাডার কম্পোজিশনে অর্ন্তভুক্ত বা নিয়োগ বিধিও সংশোধন না করেই সুপারিশকৃত সকল পদের বিপরীতে নিয়োগ পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়/অর্থ বিভাগ, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ এবং সর্বপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিদেশনাকে অবঞ্জা করার শামিল।
কর্মচারী নিয়োগ পদোন্নতিতে নিয়োগ বিধির বত্যয়: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয়,মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত ও সুপারিশে উল্লেখিত পদ সমূহের মধ্যে সম্প্রতিকালে নবসৃষ্ঠ স্টোর কিপার ও উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। নবসৃষ্ঠ বর্ণিত পদ সমূহের বিপরীতে যে নিয়োগবিধির সুপারিশ করা হয়েছে তা চুড়ান্ত নিয়োগ বিধিতে হুবুহু প্রতিফলন ঘটানোর সুস্পষ্ঠ নির্দেশনা থাকলেও সেটি অনুসরন না করে পূর্বে সুপারিশকৃত নিয়োগবিধির আলোকে এ সকল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে নবসৃষ্ঠকৃত পদ সমূহে বিপরীতে সুপারিশকৃত নিয়োগবিধি ও অভিঞ্জতার ক্ষেত্রে বর্ণিত ২টি পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ফিডার পদে ন্যুনতম ৬ বসরের অভিঞ্জতার কথা উল্লেখ রয়েছে অন্যদিকে যে নিয়োগ বিধির আলোকে ঐ ২টি পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে সেখানে ফিডার পদে ৪ বসরের অভিঞ্জতার কথা উল্লেখ রয়েছে যা পরস্পর বিরোধী ও চরম বিধি বিধানের
লংঘন। বিভিন্নভাবে অনুসন্ধানে জানা যায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বড় অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে যা অধিদপ্তরের ও মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্য্যায় পর্যন্ত ভাগাভাগি করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়ম: মন্ত্রণালয় তার নিজস্ব নিয়মের বত্যয় ঘটিয়ে মাঠ পর্যায়ে ডিএলও ও সমপর্যায়ের এবং ইউএলও/ভিএস ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলী/পদায়নের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা প্রনয়ন করেছিল এবং সেখানে উল্লেখ ছিল কোন কর্মকর্তারা তার নিজ উপজেলায়/জেলায় পদায়ন/নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। নিয়মটি প্রথম প্রথম অনুসরণ করা হলেও বর্তমান মন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহনের পর হতেই সে নিয়মের বত্যয় ঘটিয়ে যারা বিশেষ যোগাযোগ করে তাদেরকে তার নিজ উপজেলায়/জেলায় বদলী/পদায়ন করা হয়েছে বা হচ্ছে।অন্য দিকে ডিএলও পদে পদায়নের পূর্বে ফিটলিস্ট করে পদায়ন করা হলেও সম্প্রতি বদলী/পদায়নের ক্ষেত্রে সে নীতি অনুসরন করা হয়নি। যারা প্রথমে ডিএলও পদের জন্য ফিট ছিলেন না এমন অনেককেই বিশেষ যোগাযোগের কারনে ডিএলও পদে পদায়ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদোন্নতি পত্রে স্বাক্ষরকারী অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা: মো: এমদাদুল হকের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান পদোন্নতি কমিটির সুপারিশের আলোকে কর্মচারীদেও পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, পদোন্নতি কমিটিই বলতে পারবেন নিয়োগ বিধির কোন বত্যয় হয়েছে কি না? এই বলে তিনি লাইন কেটে দেন। একই ভাবে ডিপিসি কমিটির সভাপতি ও মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়নি। সচিবের নিকট নতুন সুপারিশকৃত পদ সমূহ ক্যাডার কম্পোজিশনে অর্ন্তভুক্ত ও নিয়োগ বিধিতে সংযুক্ত করা হয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
অধিদপ্তরের ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিক কর্মকতার সাথে এ বিষয়ে আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান প্রশাসনিক শৃংখলা না থাকে আর্থিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করা যায় না। বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কোন প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নেই বললেই চলে। ফলে জুনিয়র কর্মকর্তারা সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে অসাধাচরন করছে এমন কি গায়েও হাত তুলতে দ্বিধা করেন না। অবিলম্বে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে প্রশাসনিক ও আর্থিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনা দরকার বলেও অভিমত প্রকাশ করেন।
মন্তব্য করুন